আতাতুর্ক
বন্ধুত্ব হল এমন একটা বন্ধন, যা মানুষকে যেমন কাছে টানে তেমনি দূরেও ঠেলে দেয়। এর টান এমন শক্তিশালী যে বন্ধুর প্রয়োজনে নিজের সবচেয়ে দামি প্রাণটাও দেওয়া যায়। আবার অন্যকে বন্ধুর অমোঘ টানে আটকে রেখে খুব সুন্দর কায়দায় প্রতারনা করে নিজের উদ্দ্যেশ্য হাসিল করা যায় এমনকি তার সস্তা প্রাণটাও নেওয়া যায়।
বন্ধু এর শাব্দিক বিশ্লেষনঃ
ব – বুকের সবচেয়ে কাছে।
ন – নিজের একান্ত আপন।
ধু – ধোয়ার মত রহস্যময়।
তাহলে কি দাড়ালো, বন্ধু এমন আর্কষনীয় এক জিনিস যা খুবই রহস্যময়। আর মানুষের একটা অতি পুরাতন বদাভ্যাস হল রহস্যের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে তার দিকে এগিয়ে যাওয়া।
বন্ধু বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। আমার দৃষ্টিকোন থেকে দুই প্রকার। যেমন , ১. আত্মার প্রয়োজনে, ২. পরিবেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রয়োজনে।
১। আত্মার প্রয়োজনেঃ একজনের সাথে অন্যের আত্মার টানে তৈরি হয় বন্ধুত্ব। এ বন্ধুত্ব সৃষ্টির প্রকৃয়া প্রাকৃতিক। এ ধরনের বন্ধুত্বে প্রতারনা খুব কমই হয়। তবে হয় না এমন নয়। এ ধরনের বন্ধু প্রায়ই ক্ষেত্রে বাল্যবন্ধূ হয়। আমার নিজের বন্ধু, যার সাথে আমার দীর্ঘ ২১ বছরের পরিচয় । সে বন্ধুই তার নিজের স্বার্থে আমার প্রতারনা করেছিল। একাধিক বার তাকে আমি ক্ষমা করেছি কিন্তু অবশেষে তাকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে রাখতে বাধ্য হয়েছি। তাকে এ্যাভয়েড করে থাকতে আমার যে কি কষ্ট হয় তা শুধূ আমি নিজেই জানি , অন্যকে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। একটা কথা আছে, যার আছে সে বোঝে না আর যার নেই সে বোঝে তার কত পোড়ে।
২। পরিবেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রয়োজনেঃ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। একসাথে কাজ করে। এই কাজ করার ফাঁকে কারো সাথে হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বন্ধুতে পরিণত হয়। বিভিন্ন বয়সে এ বন্ধুত্ব হয়। এ বন্ধুত্ব কখনও কাজের প্রয়োজনে, স্বার্থের প্রয়োজনে অথবা একাকিত্বের যন্ত্রনা গোছানোর জন্য হয়ে থাকে। এ বন্ধুত্ব কখনও প্রতারনারও হয়ে থাকে যেমন আমার জীবনে একাধিক বার হয়েছে।
রুহিনা তাসকিন
জীবন যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনো সময় বের করে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠা যায় ষ মডেল: অপু মাহফুজ, সামি বন্ধুত্বের কথা বললেই সেই ভালুকের গল্পটাই বোধ করি মনে পড়ে আগে। সেই যে কোন এক কালে বন্ধুকে ভালুকের মুখে ফেলে গাছে চড়েছিল কোনো এক স্বার্থপর। সেই গল্প এখনো সবার মুখে মুখে। কিন্তু এর বাইরে আছে কত না অসাধারণ বন্ধুত্বের গল্প। বন্ধুর জন্য জীবন বাজি রাখা, বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো—এমন উদাহরণও মিলবে ভূরি ভূরি। ভালুকের গল্প যা-ই বলুক না কেন, আমরা সবাই আসলে জানি, বন্ধু মানেই আসলে খুব কাছের একজন। আর বন্ধুত্ব মানেই আসলে সংকটের সময় পাশে থাকা, বিপদে সাহস জোগানো—এমন অনেক কিছু। এক বন্ধু যখন হতাশায় নিমজ্জিত কিংবা সংকটে বিপর্যস্ত, তখনই অন্য বন্ধু এসে শোনাবে আশার গান—‘হাল ছেড়োনা বন্ধু…বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।’ এই তো বন্ধুত্ব!
আর সে কারণেই বন্ধু-বন্ধুত্ব এসব কিছু নিয়ে এত মাতামাতি আর বিশেষ একটি দিনকে শুধু বন্ধুত্বের জন্য উৎসর্গ করা। বন্ধু কাকে বলে? এই প্রশ্নটা খুব বোকা বোকা শোনায় আসলে। সত্যিকার বন্ধু কাকে বলে, সেটা তো আমরা ভেতরে ভেতরে জানি সবাই বেশ ভালো করেই। মানে বন্ধুত্বটা তো আসলে হূদয় দিয়ে অনুভব করার বিষয়। তবে সত্যি কথা কি, ভালো বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কী সে বিষয়?
‘বন্ধুত্ব অত্যন্ত আনন্দময় একটি ব্যাপার। আমি বলব, যেকোনো মানুষের জন্য এটি একটি বিশেষ উপহারের মতো। কিন্তু বন্ধুত্ব যত সহজে পাওয়া যায় ততটা সহজে ধরে রাখা যায় না। বন্ু্লত্ব ধরে রাখার জন্য বন্ধুকে শ্রদ্ধা করাটা খুব জরুরি। এই শ্রদ্ধা হচ্ছে আসলে বন্ধুর মতামত, সংস্কৃতি-দর্শন এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা মুশকিল। আবার পারস্পরিক ভরসার জায়গাটাও থাকা চাই। আর নিঃস্বার্থভাবে দেওয়ার ইচ্ছেটা থাকতে হবে সব সময়। বন্ধু ভালুকের সামনে পড়লে পালিয়ে গাছে চড়লে চলবে না কিছুতেই।’ বলছিলেন অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সেকালের বন্ধুত্ব আর একালের বন্ধুত্বে বিস্তর ব্যবধান। ই-মেইল, চ্যাট—এসবের হাত ধরে বন্ধুত্ব সেই কবে ডিঙিয়ে গেছে দেশ-কাল সীমানার গণ্ডি। আর বন্ধুত্বের রকম-সকমই বোধ করি বেমালুম পাল্টে দিয়েছে ফেসবুক। গোটা বিশ্বকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগের এই ওয়েবসাইট। চালু হওয়ার কেবল ছয় বছরের মাথায় ফেসবুকের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটির বেশি। এই ওয়েবসাইটের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাই বলে দেয় মানুষ আসলে এই সময়েও বন্ধুত্ব গড়ার জন্য কত না ব্যাকুল।
বন্ধু দিবসে কার্ড বিনিময়, উপহার দেওয়া-নেওয়া সেসব তো চালু হয়েছে ঢের আগেই। বন্ধু দিবস আসার আগেই তো বলে দেওয়া যায়, এবার বন্ধু দিবসেও দারুণ ভিড় থাকবে আর্চিস কিংবা হলমার্ক গ্যালারিতে। দেদার বিক্রি হবে ফুল। সেসবের বাইরেও এখন যোগ হয়েছে ভার্চুয়াল উপহার পাঠানোর কায়দা। বন্ধুর কাছে যাওয়ার সময় নেই। কিংবা বন্ধু থাকে সাত সমুদ্র তের নদী ওপারে। দূরত্ব কোনো সমস্যাই নয়। মাউস কিংবা কিবোর্ডের ইশারায় ভার্চুয়াল ফুল কিংবা শুভেচ্ছা কার্ড ঠিকই খুঁজে পাবে বন্ধুর ইনবক্স। তাতে করে, সত্যিকার স্পর্শের আনন্দটা হয়তো পাওয়া গেল না। কিন্তু এই যে দূরত্বের বাধা ডিঙানোর ব্যাপারটা, সেটাই বা কম কিসের।
কর্মব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে বন্ধুত্বের আবেদন কি কমেছে একটুখানি হলেও? সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, অবশ্যই না। ‘স্বার্থপর সময় বলেই বন্ধুত্বটা আসলে এখন আমাদের খুব বেশি দরকার। একটা সময় ছিল যখন মানুষ যৌথ পরিবারে বসবাস করত। আমরা দেখেছি, ছোট ভাইটি তার কোনো সমস্যার বেলায় বড় ভাই বা বোনের কাছে এক ধরনের নির্ভরতা পেত। এখন সেটা কমে যাচ্ছে। সে কারণে বন্ধু এখন আরও খুব বেশি দরকার।’
বছর ঘুরে আরও একটা বন্ধু দিবস (আগস্টের প্রথম রোববার) এসে যাচ্ছে। বন্ধু দিবসে বন্ধুরা সব মিলেমিশে হয়তো চুটিয়ে আড্ডা দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটছেন অনেকে। কেউ বা আবার হয়তো ভাবছেন, দলবেঁধে সব হুট করে কোথা থেকে ঘুরে আসার ভাবনা। আর কেউ আবার ফন্দি এঁটেছেন স্রেফ ফেসবুকে ভার্চুয়াল উপহার পাঠিয়েই সেরে ফেলবেন বন্ধু দিবস উদ্যাপন। বন্ধু দিবস যেভাবেই পালন করুন কিংবা নাই করুন, মনে রাখবেন, বন্ধুত্ব মানেই আসলে খুব চমৎকার একটা ব্যাপার। বন্ধুত্ব মানেই স্বার্থহীন, দাবিবিহীন দারুণ সুন্দর একটা সম্পর্ক। নিঃস্বার্থভাবে শুধু বিলিয়ে যাওয়া, বিপদে পাশে থাকা, ভরসা জোগানো। বন্ধুত্বের এই আসল মূলমন্ত্রটা যদি আমাদের জানা থাকে, তবে বন্ধু দিবস খুব ঘটা করে পালন না করলেও আসলে খুব বেশি কিছু আসে যায় না। সবাইকে বন্ধু দিবসের আগাম শুভেচ্ছা।
মাহবুব
বন্ধু কাকে বলে তা কি তুমি জান? কি জানি? কখনও তোমার কাছ থেকে এই কথা জানতে চাই নাই । বন্ধু হতে চেয়েছিলাম তুমি সেই দাকে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি, এখন খুব জানতে ইচ্ছা করছে। তুমি যা মনে করো তা অতি সাধারণ । আমার অন্তত তাই মনে হয়। তা না হলে তোমার আচরণ এমন হবে কেন আমার সাথে? তোমার চেহারা দেখলেই মনে হয় কি এক ভুল আমি করেছি তোমার সাথে বন্ধুত্ত করে । আমি না থাকলেই মনে হয় তুমি খুশি হও বেশি।
সেদিন তোমার কাছের এক বান্ধবীর কাছ থেকে শুনলাম তুমি নাকি আমাকে বন্ধু ভাবো না। আমি কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি। তাহলে তুমি আমাকে কি ভাবো? এটা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আমাদের এতদিন এর বন্ধুত্ত নষ্ট হওয়ার পিছনে তুমি দায়ী । কারণ কয়েকদিন ধরে তোমাকে খুব আনমনা দেখেছিলাম আমি । কি জানি এক অন্য রকম খেলা চলে তোমার মনে।
আমি বুঝতে পারিনি এটা । যখন আমি তোমার সাথে কথা বলতে যাই তখন তুমি পলকহীন চোখ এ শুধু আমাকেই দেখতে থাক । আমি এটা ঠিকই বুঝি কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেই না । আমার খুব হাসি পায় তখন । কিন্তু এটা আমার মনের চেহারা না । তোমার ওই চোখ এ চোখ পড়লেই আমি শেষ হয়ে যাই । নিঃশেষ হয়ে যাই ।
প্রতি মুহুর্তেই নিজেকে মনে হয় যেন নতুন করে জন্ম নেয়া কোন এক ছোট শিশু । মনের মধ্যে এক অস্থির খেলা চলে তখন । নিজের বুকে হাত দিয়ে আমি শুধু ভিতরে জোড়ে জোড়ে শব্দ শুনতে পাই । যা আমাকে আন্দলিত করে বারবার । জানি না কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে। ভালই তো ছিলাম আমরা। তাহলে আমাদের এই সুন্দর বন্ধুত্তের মাঝে কি এক দেয়াল তৈরি হল যা তোমাকে আমার থেকে আর আমাকে তোমার থেকে ভিন্ন জগৎ এ নিয়ে যাচ্ছে ।
তুমি কি বিশ্বাস করবে ইদানিং আমার সব কিছু কেন যেন ভাল লাগছে । সব কিছু রঙ্গিন লাগছে নিজের অজান্তেই । যেই আমি আগে বেশি ঘুড়াঘুড়ি পছন্দ করতাম না সেই আমি এখন অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরি । কেউ কিছু জানতে চাইলে আনমনা হয়ে যাই। তাদের কথার উত্তর দিতে পারি না । পড়ায় মন বসাতে পারি না । যেই আমি প্রতিদিন অনেক বেশি সময় পড়তাম সেই আমি এখন বেশিক্ষন টেবিল এ বসে থাকতে পারি না ।
কেন এমন হচ্ছে? তুমি তো আমার সাথে দেখাই করো না। এমন কি ফোনও করো না । তোমাকে কি করে বুঝাবো আমার মনের কথা? এটা কে কি তুমি বন্ধুত্ত বলবে নাকি তার থেকেও বেশি কিছু? তাহলে এটা কে কি তুমি বন্ধুত্ত বলবে নাকি তার থেকেও বেশি কিছু?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন