মহাকাশে অতি উজ্জ্বল সুপারনোভার সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এ ধরনের সুপারনোভা এর আগে তাদের চোখে পড়েনি। এটা যেমনি অতি উজ্জ্বল, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে প্রজ্বলমান। সুপারনোভাটির নাম এসএন ২০০৭ বিআই। ২০০৭ সালের প্রথম দিকে মার্কিন জ্বালানি বিভাগের সুপারনোভা ফ্যাক্টরি (এসএম ফ্যাক্টরি) প্রকল্প এটি খুঁজে পায়। এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে একটি রোবটিক টেলিস্কোপ। যে তারাটি বিস্ফোরণ হয়েছে তেমন তারার খোঁজ মহাকাশে এর আগে মেলেনি। একটি বামন গ্যালাক্সিতে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তারা এবং তার বিস্ফোরণের ব্যতিক্রমী আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের। বছর দুয়েক ধরে বিষয়টি নিরীক্ষা করেও উপসংহারে পৌঁছা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে।
সুপারনোভার বিচ্ছুরণ নিয়মিত কোনো ঘটনা নয়। বহু সময় অন্তর হঠাত্ করেই এমন কোনো বিস্ফোরণের দেখা মেলে। তাই বিস্ফোরণের শুরু থেকে রেকর্ড রাখা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আলোক বিচ্ছুরণের বিস্তারিত ধরা পড়ে। বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে এমন কিছু ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। সর্বশেষ বিস্ফোরণের রেকর্ড নিয়ে বার্কলের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে আগামী দেড় বছর কাজ করবেন ইসরাইলের ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। সুপারনোভাটি ধীরে ধীরে ধূসর হয়ে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্লেষণে ইঙ্গিত মিলেছে, যে তারাটি বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি ছিল অতিদানব তারা। আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি ছিল তার ভর। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছাড়াও তারাটিতে ছিল কিছু আদি উপাদান। সব কিছু মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, তারাটি হয়তো সৃষ্টি হয়েছে মহাকাশের প্রথম দিকে।
জ্যোতি পদার্থ বিজ্ঞানী এবং এসএন ফ্যাক্টরির সদস্য পিটার নিউজেন্ট বলেছেন, তারাটির কেন্দ্রের ভরই হয়তো ছিল ১০০ সৌর ভরের সমান। তারার ভেতরে অতি উচ্চ তাপ প্রবাহে সৃষ্ট ইলেকট্রোন এবং পজিট্রোন তারার কেন্দ্রকে ভেঙে তারা থেকে রক্ষা করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্টোনমি বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স ফিলিপেনকো সুপারনোভা বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য কাজে সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, এসএন ২০০৭ বিআই বিস্ফোরণটি অতিদানব তারাতেই হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর তৈরি হয় একটি কৃষ্ণ গহ্বরের। যদিও এসএন ২০০৭ বিআইর ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। তাই কয়েক দশক ধরে যা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করে আনা হচ্ছে অর্থাত্ দানব তারার বিস্ফোরণের পর কৃষ্ণ গহ্বর তৈরি হয় বলে যে কথা বলে আসা হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কৃষ্ণ গহ্বর তো হয়ইনি এবং তারার কেন্দ্র প্রায় অটুট রয়েছে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের ডিসেম্বর সংখ্যায় গবেষণার সর্বশেষ অবস্থা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পলোমার অবজারভেটরিতে স্বয়ংক্রিয় অসচিন টেলিস্কোপ সুপারনোভার সন্ধান পায়। পরে এটি শনাক্ত করে এসএন ফ্যাক্টরি। এরা এ পর্যন্ত সব ধরনের প্রায় হাজারখানেক সুপারনোভা শনাক্ত করেছে। তবে এসএন ২০০৭ বিআই ধরনের সুপারনোভা এটাই প্রথম। বিস্ফোরণটি পরে হাওয়াইয়ের মাওনা কিয়া পর্বতের ওপর স্থাপিত ১০ মিটার বে-১ টেলিস্কোপ এবং চিলির ভেরিলার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) দিয়েও প্রত্যক্ষ করা হয়। কেক এবং ভিএলটি যে চিত্র দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ বস্তু নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে, রেডিওঅ্যাকটিভ নিকেল।
নিউজেন্ট বলেন, কোনো বামন গ্যালাক্সিতে এ ধরনের সুপারনোভার সন্ধান মিলবে তেমনটি কখনোই ধারণা করা যায়নি। এ ধরনের গ্যালাক্সিগুলো হয় খুবই ধূসর। এসএন ২০০৭ বিআইকে তাই গবেষণার জন্য আদর্শ ঘটনা মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাদের প্রাথমিক বিশ্বাস, মহাকাশের আদি পর্যায়ের ওই গ্যালাক্সিতে সংঘটিত বিস্ফোরণ যথাযথভাবে নিরীক্ষার মাধ্যমে আদি মহাকাশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। গবেষকরা এ বিস্ফোরণের শিরোনাম দিয়েছেন ‘পেয়ার ইন্সট্যাবিলিটি সুপারনোভা এক্সপ্লোসন’। বিস্ফোরণের পর এর উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে।
ছবিতে শিল্পীর কল্পনায় এসএন ২০০৭ বিআই থেকে বেরিয়ে আসা পদার্থ দেখানো হয়েছে। সাদা অংশটি হলো রেডিওঅ্যাকটিভ নিকেল কোর। কালো অংশে অক্সিজেন এবং কার্বনের মতো হালকা উপাদানের উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন