SAKIB'S CLOCK(((S + P))))

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

দৈনন্দিন জীবনের কাম্য ভদ্রতা ও পরামর্শ

ভদ্রতা কি? ভদ্রতা মানুষের কিছু আচরণের সমষ্টি বা আচার-ব্যবহারের এমন একটা রূপ বা এমন কোন কর্মপদ্ধতি, যা সমাজ সাধারণত স্বীকৃতি দেয়। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে অবশ্য আরো ভাল সংজ্ঞা পাওয়া যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কোন মানুষের মধ্যে বিবেকের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। রাস্তার পাশে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করছে দেখলে আপনি হয়ত মনে মনে ভাবতে থাকবেন, কাজটা ভদ্রচিত নয় (যদি না আপনার নিজেরই এ অভ্যাস থাকে)। অবশ্য আমরা মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করেই ফেলি বা সমর্থনও করি যা আসলে সামাজিক মাপকাঠির ধারে কাছেও যায়না। যেমন ধরুন কাউকে গালমন্দ করা হল। যিনি করলেন, তিনি কিন্তু জানেন যে গালমন্দ করা কোন ভাল কাজ নয়। ধরুন, বসে বসে পরনিন্দা করছি। আমি কিন্তু জানি যে এটা অন্যায়। তবুও করছি। কেউ প্রশ্ন করলে নির্লজ্জের মত হেসে হেসে হয়ত উত্তরও দিয়ে দেই যে, আসলে কাজটি ভাল না, তবুও হয়ে যায়। আসল ব্যপার হল সমাজ অনুমতি দেয়না এমন অনেক কাজই আমরা হর-হামেশা করে থাকি। কিন্তু তবুও একটা স্কেল বা সীমারেখা আছে বলেই হয়ত আমরা কমবেশী সভ্য। সভ্যতা বা ভদ্রতা আবার সময় ও স্থান ভেদে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হতে পারে। ঢাকার অভিজাত কোন ক্লাবের পার্টিতে পেগের পর পেগ গিলতে থাকুন, আপনার ওখানকার এই বাহাদুরিকে বাহবা দেবে সবাই। ওখানের এইডিকেট (Etiquette) টি কে টেনে টুনে, হেলে দুলে রাস্তায় নামিয়েছেন তো মরেছেন। সাধারণ মানুষ আপনাকে অভদ্র ভাবতে শুরু করবে। আভিজাত্যের খোলস আলগা করে থলের বিড়ালটা বেরিয়ে পড়বে। অসম্ভব নয়, গালাগালও জুটে যেতে পারে। সুতরাং, ভদ্রতার কিছু কিছু উপাদান অর্থাৎ, সামাজিকতা বা স্থান-কাতর বিষয়গুলি তার স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকুক। বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। আমাদের এই আলোচনার সীমানায় আজকে তার প্রবেশ অনাকাঙ্খিত। আমরা এমন কিছু সাধারণ বিষয়ে আজকের এ আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব, যা দৈনন্দিন জীবনে মামুলী মনে হয়, কিন্তু ভদ্রতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; অন্ততঃ সে রকমই ভাবছি। মোবাইল ফোনঃ আধুনিক যুগ প্রযুক্তির যুগ, সন্দেহ নেই। প্রযুক্তির অন্যতম একটা উপহার তামাম মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে, মোবাইল ফোন। প্রযুক্তি কল্যাণ আনে কখন? যখন তাকে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের দিকে তাকান। চারিদিকে মোবাইলের আওয়াজ। কি উদ্ভট, বিরক্তিকর রিং টোনের স্রোতে আমরা ভেসে চলেছি! ভদ্র প্রাণী হিসেবে অপরকে কষ্ট দেবার মধ্যে তো কোন মহত্ব নেই। আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন, আপনি আপনার পাশের ব্যক্তিটির মোবাইল ফোনের রিং টোনে বিরক্তি বোধ করছেন? আপনার পাশের যাত্রীটির ফোনে কথা বলার উচ্চৈঃস্বরে আপনি সহ অন্যান্য যাত্রীদেরও সমস্যা হচ্ছে? আপনি কোন গোপন কথা শুনে বিব্রত বোধ করছেন? মোবাইল সেটে বেজে চলেছে অরুচিকর কোন গান? অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনার চোখ পড়ে গেল আপনার পাশে বসে থাকা যাত্রীর মোবাইলের বড় স্ক্রীনে অশালীন কোন ছবি বা ভিডিও? মোবাইল অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য, নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার ভদ্রচিত ব্যবহারও নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। মসজিদে মোবাইল নিয়ে যাওয়া আর একটি নতুন ব্যধি। একটু সাধারণ বিবেক বোধ থাকলেও যে কেউ আমার বিশ্বাস, মোবাইল ফোনটাকে মসজিদে, মন্দিরে, গীর্জায় বা অন্য কোন প্রার্থনা সভায়, অন্যান্য মিটিং-এ কিংবা ক্লাস রুমে ঢুকবার আগেই নিঃশব্দকরণের একটা ব্যবস্থা করবে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষিত লোকই এই বিষয়টাকে কোন রকমই গুরুত্ব দিতে চাননা। পরামর্শঃ একটু সচেতনতা মোবাইল বিষয়ক বিড়ম্বনা দূর করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনুগ্রহ করে আপনি আপনার মোবাইলের রিং টোন-এর সাউন্ড-এর ভলিউম কমান। বাইরে বের হলে ভলিউম অফ করুন। মোবাইল রিং টোনের আসলে কি কোন দরকার আছে? বাইরে বের হলে আপনি শুধু ভাইব্রেশন সেট করে রাখুন। মোবাইলে আস্তে কথা বলুন। আপনি নিশ্চিত থাকুন অপর প্রান্তে যিনি আছেন তিনি আপনাকে শুনতে পাবেন। মোবাইলে গান শুনতে একান্তই যদি ইচ্ছে হয় তো হেডফোন ব্যবহার করুন। অপরকে গান শোনাবার কোন দরকার নেই। বাসার পাশের মসজিদে গেলে আপনি মোবাইলটা সাথে নেবেন না, প্লিজ। দূরে কোথাও গেলে মসজিদে ঢোকার আগেই আপনার মোবাইল ফোনের পাওয়ার অফ করে দিন। ধুমপানঃ ধুমপান এমনিই একটা অপরাধ। তার উপর কেউ যদি নাকে মুখে ধোঁয়া দেয়, সেটা আরও বড় অন্যায়। অবাধ ধুমপান আমাদের সমাজে ব্যধির আকার ধারণ করেছে। যেখানে সবসময় অনেক লোকের আনাগোনা, সেখানে ধুমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ মানুষ দেদারছে সে সব স্থানেও ধুমপান করেছে! মানুষের বিবেকবোধ কি এতটাই লোপ পেয়েছে যে বদ্ধ গাড়ির মধ্যেও তারা ধুমপান করে? এমনও দেখা গেছে, “ভাই সিগারেটটা না খেলে হয়না?” এই কথার উত্তর আসে এমনঃ “খেলে কি হইছে?”, পাল্টা প্রশ্ন! অথবা এর চেয়েও খারাপ কোন কথা। আমরা অবাক হই যখন দেখি মানুষ বদ্ধ জায়গায় সিগারেট খাওয়াকে কোন অপরাধই মনে করছে না। পরামর্শঃ ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, স্টিমারে, অর্থাৎ যে কোন যানবাহনেই আপনি সিগারেট খাওয়া বন্ধ করুন। মনে রাখবেন আপনার সাথে যে ছোট্ট শিশুটি ভ্রমণ করছে, সেও আপনার বিষাক্ত ধোঁয়ার শিকার। কোন জন সমাগমেই আপনি ধুমপান করবেন না। ছোট বাচ্চাদেরকে সিগারেট আনার জন্য আদেশ করবেন না, সে আপনার হোক কিংবা অপরের বাচ্চা। হাঁচি দেয়াঃ হয়ত খেয়াল করে থাকবেন, হাঁচি এলে অনেকেই সুযোগ থাকলেও দূরে সরে যাননা। যেন, সবার মধ্যে থেকে হ্যাঁচ্চো দিতে পারলে ভাবখানা এমন, কি একটা কাজ করা হল। রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করেও কিছুটা ভদ্রতার পরিচয় দেয়া যায়। হাঁচিতে অনেক সংক্রামক জীবাণু থাকে। অনেকের হাঁচিতে মারাত্মক দূর্গন্ধ বের হয়। আমাদের প্রায় সবারই প্রতিনিয়তই এই ঝামেলায় পড়তে হয়। পরামর্শঃ হাঁচি এলে সবার কাছ থেকে দূরে সরে যান। সম্ভব না হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন। “সরি/দুঃখিত” বলুন। শরীরের ঘেঁষে কথা বলাঃ কথা বলতে বলতে, খাতির জমাতে জমাতে এক্কেবারে মুখের কাছাকাছি চলে এসেছে অনেকে, কখনও এমন ঘটেছে আপনার জীবনে? অবশ্যই ঘটেছে। আপনি তো ভদ্রতাবশে কিছুই বলতে পারছেননা। খালি উসখুস করছেন। নাক চাপতে পারছেননা। আপনার ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। হঠাৎ করে বক্তার মুখের এক বিন্দু থুথু হয়ত স্থান করে নিল আপনার মুখে। আপনার গা গুলিয়ে উঠছে, নাক কুঁচকে যাচ্ছে। কারণ আপনার গায়ের খুব নিকটে এসে অত্যন্ত খাতিরে আলাপ যিনি জমিয়েছেন তার হ্যালিটোসিস (Halitosis, এই রোগে মুখে দূর্গন্ধ হয়/ঠিক মত দাঁত না মাজলেও দূর্গন্ধ হতে পারে) আছে। পরামর্শঃ অন্যের সাথে কথা বলার সময় দুরত্ব বজায় রাখুন। পাশ ঘেঁষে আসবেন না এবং আঙ্গুল কিংবা হাত দিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলবেন না। কথা বলার সময় আপনার মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ কিংবা থুথু বের হয় কি না তা জানুন। থুথু ও কলার খোসা ফেলাঃ সিঙ্গাপুরের রাস্তায় কে যেন কলার একটা খোসা ফেলেছিল (কে আবার? বাঙ্গালী হবার সম্ভাবনাই বেশী)। পুলিশকে ছুটে আসতে দেখা গেল। কলার খোসাটি রাস্তা থেকে তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন পুলিশ। আমাদের দেশে পুলিশের কাছ থেকে আবার এমন সার্ভিস আশা করতে যাবেননা। আর, পুলিশের অনেক কাজ আছে। কলার খোসাটি ফেলতে গেলে উপরি ইনকামে ভাটা পড়তে পারে। ততক্ষণে রাস্তার দু একটা গাড়ি চলে যাবে। সে যা হোক। তাছাড়া এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এত কলার খোসা জোগাড় করে, তা ফেলাও চাট্টিখনি কথা নয়। কলা খেয়ে আমাদের দেশের মানুষ খোসাটি রাস্তায় ফেলতে দেখেননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে? হয়ত যাবেনা। এখানে সেখানে থুথু, কাশি ও পানের পিক ফেলাটা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। এই সব কম্মগুলি ভদ্রতার এক্কেবারে বিপরীত, মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর ও অরুচিকর, এবং অবিবেচকের মত কাজ। এ দেয়াল, সে দেয়াল পানের পিকে রঞ্জিত করে সৃষ্টিশীল হবার চেষ্টা করে অনেকেরই অপদস্ত হতে হয়। পরামর্শঃ কলা খাবেন। খুবই উপকারী ফল। কিন্তু কলার খোসাটি যদি ফেলার মত জায়গা খুঁজে না পান তো অপেক্ষা করুন। কোথাও না কোথাও ফেলার ব্যবস্থা আছে। থুথু, কাশি ও পানের পিক ফেলার ক্ষেত্রেও একই কথা। আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই এসব আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে পারেন। শব্দ করে খাওয়াঃ আপনার পাশের ভদ্রলোক শব্দ করে খাচ্ছেন। কেমন লাগছে আপনার? একটু ভাল করে চিন্তা করে দেখুন এটা কতটা অস্বস্তিদায়ক একটা ব্যাপার। খাওয়ার ভদ্রতা হল পরিমিত খাওয়া এবং নিঃশব্দে খাওয়া। কারও সাথে খেতে বসলে খাওয়ার আদবের দিকে খেয়াল না রাখলে খাওয়ার আনন্দই মাটি হয়ে যায়। পরামর্শঃ আপনি নিঃশব্দে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অল্প করে গালে দিন। ধীরে ধীরে খান। খাবারের প্রতি লোভী না হয়ে, বড় বড় চোখে খাবারের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি না দিয়ে বরং আপনার শরীরের কল্যাণের জন্য আপনি খাচ্ছেন, এমন মনে করে খেতে থাকুন। জোরে কথা বলাঃ জোরে জোরে কথা বলার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই। বরং জোরে কথা বলাতে শ্রোতা বিরক্ত হয়। অথচ আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা উচ্চমাত্রার ডেসিবেলে কথা বলে অভ্যস্ত। শিড়দাঁড়া শক্ত করে, গলা উঁচিয়ে, পরিবেশের অবস্থা বিবেচনা না করে বলা এই উচ্চমাত্রার কথা পাশের অনেকেরই বিরক্তির কারণ হতে পারে, সে ব্যাপারে অনেকেরই খেয়াল থাকেনা। চেঁচিয়ে কথা বলা দারুন অভদ্র একটা কাজ। এমনকি অনেককেই দেখা যায়, হাসপাতাল, মসজিদ বা কোন প্রার্থনা সভা, কিংবা গাড়ির মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি করেন। পরামর্শঃ ধীরে ধীরে এবং সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলুন। উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা ত্যাগ করুন। কথা আস্তে বললেই সেটা সুন্দর ভাবে শ্রোতার কানে ঢোকে। হাসপাতালে এবং প্রার্থনা সভাতে আপনার গলাকে এক্কেবারে নিচু করে ফেলুন। অপ্রয়োজনীয় কোন কথা-ই সেখানে শুধু নয়, কোথাও-ই বলার দরকার নেই। রাস্তা দিয়ে হাঁটাঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় সেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেন। হাঁটার গতি সবার সমান হয়না। ঢংও হয়না এক রকম। সুতরাং রাস্তায় হাঁটার সময় খেয়াল রাখা উচিৎ সামনে পেছনে কেউ আছে কিনা। আপনি হয়ত ঠিক মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। চিকন রাস্তা হলে পিছন থেকে আপনার চেয়ে জোরে হেঁটে আসা পথিকের কষ্ট হতে পারে। পরামর্শঃ রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটুন। ধীরে ধীরে অবনত মস্তকে হাঁটতে থাকুন। সামনে থেকে হেঁটে আসা কারও সাথে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকলে আপনি দাঁড়িয়ে যান, তাকে আগে যাবার সুযোগ দিন। ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটার সময় ভাবুক হবার চেষ্টা করবেন না। দুর্ঘটনায় স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটতে পারে। সভা কিংবা মজলিসেঃ অনেকে মসজিদে বা কোন সভাতে আসেন দেরী করে; অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বভাবজাত দেরী। কিন্তু আসন গেড়ে বসতে চান সবার সামনে। এ কেমন অত্যাচার? এ কেমন অনৈতিক কর্ম? আপনি কি ভেবে দেখেছেন সবাইকে ডিঙ্গিয়ে আপনি যখন প্রথম সারির একজন সম্মানিত শ্রোতা হবার চেষ্টা করছেন (আপনার সম্মান অনেক আগেই গেছে), আপনি এই মজলিসের ডিসিপ্লিনই শুধু ভেঙ্গে দেননি, আপনি প্রত্যেকের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন? আপনি কি খেয়াল করেছেন আপনার এহেন আচরণের জন্য ছোটখাট একটা শোরগোলের সৃষ্টি হয়েছে? উপস্থিত কেউ যে আপনাকে সরাসরি কিছু বলে না, সে আপনার ভাগ্য। এই অসৌজন্য আচরণের দায়ে আপনার শাস্তি হওয়া উচিৎ। পরামর্শঃ সভা শুরুর আগেই বা যে সময়েই আপনি আসুন না কেন, যেখানে বসে যেতে পারলে অপরকে ডিঙ্গাতে হয়না, অপরকে ঠেলে-ঠুলে যেতে হয়না, তেমনই একটা জায়গা বেছে নিন। আগেই এসে উপস্থিত হয়েছেন এমন দর্শক-শ্রোতাদের ঠিক পিছনে বা পাশে গিয়ে বসুন। অযথা মাঝে যাবার চেষ্টা করবেন না। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এতে আপনার সম্মান এতটুকুও কমে যাবে না। নইলে আপনার সাথে আপনার সন্তান থাকলে সেও ধীরে ধীরে আপনার এই আচরণ আত্তীকৃত করে নেবে। প্রত্যেক মানুষের প্রতিই ভালবাসা ভদ্রতার পরিচয়। একটুখানি বিবেকবোধ জাগ্রত করতে পারলে মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থানের ক্ষেত্রে সহনীয় বিষয়গুলি আত্মস্থ করা সম্ভব হবে। মানুষকে ভালবাসতে পারলে তার সুখ-সুবিধার প্রতিও সবাই সচেতন হয়ে উঠবে। একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই যে সে ভদ্র হবে এমন কোন কথা নেই। ভদ্রতার নির্দিষ্ট কোন একাডেমিক পাঠ নেই। ধীরে ধীরে এটা শিখতে হয়। প্রকৃতির দিকে তাকালেই সেখান থেকে অনেক পাঠ গ্রহণ করা যায়। পিঁপড়া যখন লাইন বেয়ে চলতে থাকে, নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে, বিপরীত দিক দিয়ে অতিক্রম করার সময় প্রত্যেকেই একে অপরকে যাবার সুযোগ করে দিচ্ছে ওরা। যেটি অভারটেক করতে চায় সেটি নিজে থেকেই জায়গা করে নেয়। কি অদ্ভুত ব্যাপার! হিংস্র প্রাণীদের কথা বাদ দিলাম। কারণ জীবিকার প্রয়োজনে ওদের হিংস্রতা অবধারিত। এ ছাড়া, প্রকৃতি নিজ থেকেই সৌজন্যের লীলাভূমি। মানুষকেই শুধু সৌজন্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। স্কুলপাঠ দরকার হয়না, ভদ্রতা ও সৌজন্য শিক্ষার জন্য নিজের ইচ্ছা ও বিবেকের তাড়নাই যথেষ্ট। সামাজিক প্রাণী হিসেবে মানুষের রয়েছে নিরাপদে ও স্বতঃস্ফুর্ত চলাচলের অধিকার। সে চলাচলের মাধ্যমে তার দৈনন্দিন কর্মের প্রবাহ সুন্দর ও সুসহ হবে। একসাথে ওঠাবসা, চলাচল করায় যে সামাজিক বন্ধন তৈরী হয় তা সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ হোক। যাযাবর বলেছিলেন “সৌজন্যের প্রকাশ কর্মে”। বাহ্যিক ছোটখাট অনেক কাজকর্মের সাথে সাথে, অন্যের সাথে আমাদের আচার ব্যবহারের এমন একটা মাত্রা নির্ধারণ করা উচিৎ, যাতে অন্যের সুবিধা লঙ্ঘিত না হয়। মনে রাখা দরকার অপরকে প্রদত্ত সুবিধাটি আসলে পুরো সমাজকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার একটা প্রত্যয়। তাতে ক্ষতি তো নেই-ই বরং সম্মিলিত এ বোধ ও আত্মত্যাগের মাঝেই নিহিত রয়েছে আমাদের সামগ্রিক সুখের বিস্তর উপকরণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন