SAKIB'S CLOCK(((S + P))))

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

ইন্টারনেটঃ প্রযুক্তির এক বিষ্ময় বিশ্ব!


ইন্টারনেটঃ প্রযুক্তির এক বিষ্ময় বিশ্ব!
বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো। অস্কারের উপর কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য তার একান্ত দরকার। ঠিকঠাক মত কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা। আবার কিছু বলতে গেলেও তা মানতে নারাজ। মহামুশকিল। আসলে তথ্যগুলো ঠিকমত কোথায় রয়েছে সেটা মনে করতে পারছেনা এ মূহুর্তে। কোন সমস্যা নেই! আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটার দিয়ে ইন্টারনেটের অন্তঃহীন বিশ্বে লগইন করুন অথবা সার্চ দিন, দেখবেন মূহুর্তে লাখ লাখ তথ্য এসে হাজির আপনার মনিটরের পর্দায়। পেয়ে যাবেন যা খুঁজছিলেন। ইন্টারনেট হলো ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে বা তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়ক। সারাবিশ্বে লাখ লাখ নেটওয়ার্ক একসূত্রে গেঁথে তৈরী হয়েছে এই মহাসড়ক। যার মাধ্যমে কোটি কোটি ব্যবহারকারীরা নিজেদের মাঝে করতে পারে তথ্য ও ভাবের বাধাহীন বিনিময়।

১. আদিকথাঃ
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৯ সালের দিকে একদল উৎসাহী বিজ্ঞানী যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমূলে বদলে দিতে ভিন্নধর্মী গবেষনা শুরু করেন। উদ্দেশ্য এমন এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যার মাধ্যমে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা দ্রুত তাদের চিন্তা ও মতামতের বিনিময় ঘটাতে পারেন। প্রকল্পের নাম ছিলো আরপানেট(ARPANET)। সেসময় সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার থেকেও তথ্য নিতে হলে ম্যাগনেটিক টেপ বা ছিদ্রযুক্ত কার্ড ব্যবহার করতে হতো। পরবর্তী পর্যায়ে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। জন্ম নেয় নিউজগ্রুপ USENET-এর, যার পরিচিতি এখন বিশ্বব্যাপী। ১৯৯০ সালে এসে আরপানেট পরিবর্তিত হলো ইন্টারনেট-এ।

২. দায়িত্ব কার?
এই যে সারাবিশ্বজুড়ে এতবড় একটি নেটওয়ার্ক তার কিন্তু কোন কেন্দ্রীয় দফতর নেই। নেই কোন একক কর্তৃত্ব। প্রতিটি নেটওয়ার্ক তাদের নিজস্ব পদ্ধতি, নিয়ম ও ব্যবস্থাপনায় চলে। তবে ইন্টারনেটের মূল কাঠামোটি রক্ষনাবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডশন (NSF)। তাছাড়াও রয়েছে কিছু ইন্টারনেট সোসাইটি।। যারা নেটওয়ার্ক তৈরী, মান-নিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকগুলো দেখে থাকে।

৩. কি কি সুবিধা দেয় ইন্টারনেট?
সরকারী-বেসরকারী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা যেকোন একক ব্যবহারকারী তাদের সংযোগের ধরনের ভিত্তিতে নীচের সুবিধাগুলো পেতে পারেন-
০১) ই-মেইল (E-mail)
০২) ভিডিও ফাইল দেখা (Youtube)
০৩) ভয়েস মেইল, ভয়েস চ্যাট ও ভিওআইপি
০৪) ভিডিও কনফারেন্স ও ভিডিও টেক্সট
০৫) ফাইল ট্রান্সফার (FTP)
০৬) সংবাদ (Usenet)
০৭) বুলেটিন বোর্ড সার্ভিসেস (BBS/RSS)
০৮) দূরবর্তী লগইন (Telnet)
০৯) ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-ক্যাশ ও কেনাকাটা
১০) Wi-Fi ও WIMAX-এর সুবিধাসমূহ
১১) মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি

৪. কিভাবে কাজ করে?
বর্তমানে ইন্টারনেট হলো সবচেয়ে বড় তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম। এই তথ্য বা ডেটা চলাচল করে নেটওয়ার্ক বা কমিউনিকেশন লাইনের মাধ্যমে একটি নিয়মের অধীনে, যাকে বলা হয় “প্রটোকল”। দু’ধরনের প্রটোকল সাধারনতঃ ব্যবহৃত হয়। ট্রান্সমিশন প্রটোকল (TCP) এবং ইন্টারনেট প্রটোকল (IP)। টিসিপি প্রাথমিক তথ্যকে ভেঙ্গে টিসিপি প্যাকেট তৈরী করে। আর আইপি ঐ টিসিপি প্যাকেটগুলো ভেঙ্গে আরো ক্ষুদ্রতর প্যাকেট তৈরী করে। ক্ষেত্রে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যেতে আরো দু’টো প্রটোকল Serial Line Internet Protocol(SLIP) ও Point to Point Protocol(PPP)-এর প্রয়োজন হয়। এরপর প্যাকেটগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্য বা ঠিকানায় দ্রুত পৌঁছাতে ঘুর পথে না গিয়ে সবচেয়ে সোজা পথটি ধরে। আমাদের দেশে এই তথ্য দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করে মূলত সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প পথে V-SAT বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। সাবমেরিন কেবলের উপর BTRC এর পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে। তারা যেকোন সময় যেকোন ওয়েব সাইটে প্রবেশ বন্ধ করার অধিকার সংরক্ষন করে।

৫. ইন্টারনেট ঠিকানাঃ
যে কোন তথ্য গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্যে স্বাভাবিকভাবেই একটি ঠিকানা প্রয়োজন। ইন্টারনেটে ঠিকানার এই পদ্ধতিকে বলা হয় Domain Name System (DNS)। DNS ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত সব Host কম্পিউটারকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে একটি Domain নাম দেয়। সর্বোচ্চ Domain সাধারনতঃ হয় দেশের নাম। যেমন যুক্তরাজ্যের জন্যে .uk, যুক্তরাষ্ট্রের .us, চীনের জন্যে .cn, বাংলাদেশের .bd ইত্যাদি। পরের স্তরের Domain হয় প্রকারভেদের উপর। যেমন edu(Education), org(Organization), net(Network), gov(Government), ac(Academic), com(Commercial) ইত্যাদি। তার পূর্বে সাধারনত Domain Provider-এর নাম থাকে।

৬. কিভাবে যুক্ত হওয়া যায়?
ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়ার জন্যে প্রাথমিকভাবে দরকার একটি কম্পিউটার, একটি সংযোগ লাইন ও একটি মডেম। মডেম (Modulator-Demodulator) হলো এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটালে এবং ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগে রূপান্তরিত করার যন্ত্র। মডেম সাধারনতঃ ডায়াল আপ, জিপিআরএস বা এজ প্রকৃতির হয়ে থাকে। যে সকল মোবাইল সেট-এ GPRS বা EDGE সুবিধা আছে, সেগুলো মডেম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া যেসব LAN বা WAN ব্রডব্যান্ড-এর সঙ্গে যুক্ত, তার অন্তর্ভূক্ত হয়েও ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যায়।

৭. বাংলাদেশে বর্তমান সংযোগের রকমফেরঃ
ইন্টারনেটে যুক্ত হতে মূলতঃ কিছু পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
ক) বিটিআরসি বা অন্য বেসরকারী ল্যান্ডফোন লাইন বা ডায়াল আপ।

খ) ব্রডব্যান্ড লাইন যা সাধারনতঃ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (ISP) দিয়ে থাকে। তারা BTRC-
এর কাছ থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চালিত ব্যান্ডউইথ কিনে তা আবার গ্রাহকদের কাছে
বিক্রি করে। ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞানুযায়ী যে গতি পাওয়া সম্ভব তা কখনোই পাওয়া যায়না ISP
ওয়ালাদের অতিমুনাফাখোরী মনোবৃত্তির কারনে।

গ) ওয়্যারলেস বা তারবিহীন নেটওয়ার্কঃ এটি মূলতঃ মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো একই পন্থায়
ব্যান্ডউইথ কিনে তার গ্রাহকদের দেয় কাছে গলাকাটা দামের বিনিময়ে।

ঘ) WiFi বা WiMAX হলো তারবিহীন নেটওয়ার্ক। ভারতসহ অনেকদেশে খুব অল্পখরচে WiFi পরিচালিত হলেও এর ডেটা ট্রান্সফার রেট ও টাওয়ারের এলাকা কভারেজ সীমিত হওয়ায় খুব বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। WiFi পরিপূর্নভাবে জায়গা করে নেওয়ার আগেই বাংলাদেশে এই বছরের মাঝামাঝি চলে আসবে উন্নততর সেবা নিয়ে WiMAX নেটওয়ার্ক। বলা যায় এটা WiFi-এর উন্নততর সংস্করন যা উচ্চগতিসম্পন্ন। এর এলাকা কভারেজও হবে অনেক বেশি। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১১০ টি দেশে এই নতুন প্রযুক্তি চালু হয়ে গেছে। এপ্রযুক্তি এলে অনেক সুবিধার মাঝে IP মোবাইল ফোন, এফ এম, ATM সংযোগ, রেডিও, দ্রুততার সঙ্গে ভিডিওচিত্র আদান-প্রদান ছাড়াও পাওয়া যাবে ট্রিপল প্লে সার্ভিস। যাতে একসঙ্গে টেলিভিশন (IP TV) দেখার ব্যবস্থা, ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেটে কাজ করা যাবে। বর্তমানে অনেক মোবাইল সেট GPRS সম্বলিত হলেও এখন পর্যন্ত WiMAX সুবিধা নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে তা সেটগুলিতে চলে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশের মত নদী-নালা আর খাল-বিলের দেশে তারহীন প্রযুক্তি WiMAX-এর মাধ্যমেই সম্ভব উচ্চগতির ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দেওয়া। যেমনটি ঘটেছে মোবাইল ফোন সেবার ক্ষেত্রে দেশজুড়ে। তবে মনে হয় মোবাইল কোম্পানীর 3G সার্ভিসের সঙ্গে WiMAX-এর একটা টক্কা লাগবে ও কষ্টকর বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হতে পারে।

উন্নতবিশ্ব তথা আমাদের দেশের মানুষও ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রবেশ করছে তথ্য সাম্রাজ্যের এক মহাজগতে। অসংখ্য মুক্তমনা মানুষ এই তথ্য জগতকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে তুলছেন তাদের মেধা প্রকাশ ও ব্লগ লেখার মাধ্যমে। ইন্টারনেট সত্যিকার অর্থেই বিশ্বকে এনে দিয়েছে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ছোট পর্দায়। তাই একে এড়িয়ে থাকা আর অচলায়তনে বন্দী থাকা হবে একই কথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন