SAKIB'S CLOCK(((S + P))))

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

স্বাধীনতা সুরক্ষায় মহানবী (সাঃ)এর আদর্শ


স্বাধীনতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত। এটি মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রত্যেক মানুষই চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে। কেননা আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগেনো, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টিকে না, তেমনি স্বাধীনতা ব্যতীতও কোন জাতি কখনো বেঁচে থাকতে পারে না। স্বাধীনতাই মানুষের অস্তিত্বে লালিত সুপ্ত প্রতিভা ও শক্তিকে ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে বিকশিত করতে সহায়তা করে। আর তাইতো দেখা যায় এ চির সত্যকে উপলব্ধি করে গণতান্ত্রিক জীবনবোধে উজ্জীবিত হয়ে, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যুগে যুগে অনেক জাতি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ-সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়েছে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার সংগ্রামে অনেক ব্যক্তিই তার যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করে স্বাতন্ত্র্য আবাসভূমি নির্মাণের প্রয়াস পান। ইতিহাসের এমনি একজন মহানায়ক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- যিনি আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে মদিনা নগরীতে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মদিনাকে স্বাধীন করেছিলেন সুদখোর, চক্রান্তবাজ, ভণ্ড, ইয়াহুদীদের কবল থেকে। তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের ফাউন্ডেশন বা ভিতকে মজবুত করার নিমিত্তে মদিনা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মুসলমান, ইয়াহুদীও পৌত্তলিকদের নিয়ে সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মানবিক ও ধর্মীয় অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন- যা charter of Medina বা মদীনা সনদ নামে খ্যাত। একটি স্বাধীন কল্যাণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এটিই পৃথিবীর প্রথম লিখিত ‘শাসনতন্ত্র-সংবিধান।’ এ সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে তা হলো- জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বেশেষে সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এছাড়াও চিন্তা ও মত প্রকাশের পূর্ণ সুযোগ দান করে মহানবী (সাঃ) ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সামাজিক ও রাস্ট্রীয়ভাবে সর্বতোরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। আজ আমার বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই,আইন শুধু সরকারি দলের জন্য। রাসূল (সাঃ) কর্তৃক এ উদ্যোগ গ্রহণ নিঃসন্দেহে স্বাধীনতা সুরক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বকে স্মরণ করে দেয়। এ ঐক্যের ফলে অভ্যন্তরীণ বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সাহস পায়নি কিন্তু আমাদের জাতি আজ দুভাগে বিভক্ত তাই বিদেশী শক্তি আমাদের উপর প্রভাব কাটাতে কুন্টাবোদ করেনা। মহানবী (সাঃ) কতটা স্বাধীনতাপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তার পরিচয় মেলে ৫ম হিজরীর সাওয়াল মাসে সংঘটিত খন্দকের যুদ্ধে। মদিনার অভিশপ্ত ইয়াহুদী জাতির প্ররোচনায় মক্কার কুরাইশরা যখন মদিনা আক্রমণের প্র‘তি নেয় তখন নবীজী ইসলামী রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য সালমান ফারসীর পরামর্শক্রমে মদিনার চারপাশে পরিখা খনন করেন। মুসলমানরা যাতে সাওয়াবের আশায় এই কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয় সেজন্য তিনি নিজ হাতে পরিখা খননের কাজ করেন। তিনি নিজে মাটি কেটেছেন। তাঁর সাথে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে খননের কাজে যোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে কুরাইশ বাহিনী পরিখা পার হয়ে মদিনায় আসতে না পেরে কিছুদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ব্যর্থ মনে মক্কায় ফিরে যায়। এভাবে মহানবী (সাঃ) মদিনার স্বাধীনতাকে কুরাইশদের খড়গ হস্ত থেকে রক্ষা করেন। প্রতি দিন ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি কে ভারতিয় বি এস এফ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আমরা কোন প্রতিবাদ ও করতে পারিনা, স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব আজ বাস্তবিক পক্ষে হুমকির মুখে তাই রাসুল(সঃ) এর আর্দশে উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় জাপিয়ে পরতে হবে সবাইকে। এছাড়াও মদিনার স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্যই মহানবী (সাঃ) উহুদের ময়দানে পবিত্র দন্ত মোবারক বিসর্জন দিয়েছেন। অবশেষে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও আক্রমণ প্রতিহত করে ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) মক্কাকে স্বাধীন করলেন জালিম, সন্ত্রাসী ও পৌত্তলিকতার পঞ্জিকা থেকে। অতঃপর সামান্য সময়ের ব্যবধানে স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধিকে বিস্তৃত করে পুরো আরব ভূখন্ডকে ভরে দিয়েছিলেন অবারিত শান্তি ও নিরাপত্তায়, অভূতপূর্ব শৃংখলায়, অপূর্ব সুষম বন্টনে, অবর্ণনীয় ভ্রাতৃত্ববোধে এবং স্বপ্নাতীত কল্যাণে। মহনবী (সাঃ) স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সকল বিষয়াবলীকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান। ফলে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি জনগণই স্বাধীনতার আস্বাদন ভোগ করতে থাকে, সুফল পেতে থাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। শুধু তাই নয়, স্বাধীন দেশে বহিঃশত্রুর আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য মহানবী (সাঃ) সুসংগঠিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ঈমানের বলে বলীয়ান এমন সেনাবাহিনী গঠন করেন- যারা স্বদেশের মাটির জন্য, মানুষের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূলে পাক (সাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, (আল্লাহর পথে) একদিন সীমান্ত রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকা হাজার দিনের মনযিল অতিক্রম অপেক্ষা উত্তম’ (তিরমিযী)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, দুই প্রকারের সেই চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। প্রথমতঃ সেই চক্ষু – যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; দ্বিতীয়তঃ যে চক্ষু আল্লাহর পথে (সীমান্ত) পাহারাদারী করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়।” (তিরমিযী)। রাসূল (সাঃ)-এর এ অমিয় ফরমানে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম তরুণরা দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে দলে দলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে শুরু করে। এভাবে দেখা যায় মহানবী (সাঃ) শুধু স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি বরং স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে, জনগণের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাই আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ হতে শিক্ষা নিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি একে অর্থবহ করতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা। তাহলেই স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী প্রত্যেক শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরাও বিশ্বের বুকে শির উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন